
খালেকদাদ চৌধুরী জন্মগ্রহণ করেন ১৯০৭ সালের ২রা ফেব্রুয়ারী নেত্রকোণা মহকুমা বর্তমানে জেলা-র অন্তর্গত মদন থানার
চাঁনগাঁও গ্রামে নিজ মাতুলালয়ে
তাঁর পৈত্রিক
নিবাসছিল ওই নেত্রকোণারই অন্তর্গত আরেকটি থানা আটপাড়া সোনাজোড় গ্রামে। তাঁর পিতার নাম ছিলেন মরহুম নওয়াব আলী চৌধুরী এবং মাতা- মরহুমা নজমুন্নেছা চৌধুরী।
নিবাসছিল ওই নেত্রকোণারই অন্তর্গত আরেকটি থানা আটপাড়া সোনাজোড় গ্রামে। তাঁর পিতার নাম ছিলেন মরহুম নওয়াব আলী চৌধুরী এবং মাতা- মরহুমা নজমুন্নেছা চৌধুরী।
খালেকদাদ চৌধুরী' যখন ৪ থেকে ৫ বছর বয়স
তখনই তাঁর বাবা তাঁকে স্কুলে ভর্তি করে দিলেন। ১৯১৬ সালে রাজেন্দ্রগঞ্জ প্রাইমারি স্কুলে চতুর্থ শ্রেণী পাস করে জাহাঙ্গীরপুর মধ্য ইংরেজি স্কুলে তৃতীয়
শ্রেণীতে ভর্তি হন। এখানেই তাঁর প্রথম তাঁর পাঠ্য বই ছাড়াও অন্য বই পড়ার অভ্যাস
গড়ে ওঠে। জাহাঙ্গীরপুর মধ্য ইংরেজি স্কুলে তাঁর চার বছর অতিবাহিত হয়।
১৯১৯ সনে ৬ষ্ঠ শ্রেণীর
পরীক্ষায় খালেকদাদ প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হয়ে জাহাঙ্গীরপুর মধ্য ইংরেজি স্কুল ত্যাগ করেন এবং তাঁর পরের বছর জানুয়ারী
মাসের প্রথম দিকে নেত্রকোণা দত্ত
হাইস্কুলে সপ্তম শ্রেণীতে ভর্তি হন। নেত্রকোণায় তাঁর অধ্যয়নকাল ছিল ১৯২০ থেকে ১৯২৪ সাল পর্যন্ত। দত্ত হাইস্কুলটি ছিল সে অঞ্চলের একটি সেরা প্রাচীন বিদ্যায়তন এবং অভিজ্ঞ শিক্ষকমন্ডলী দ্বারা পরিচালিত। ১৯২৪ সালে নেত্রকোণা দত্ত উচ্চ বিদ্যালয় হতে ১ম বিভাগে ম্যাট্রিক পাশ করেন। ১৯২৬ সালে আই, এ পাশ করে কলকাতার ইসলামিয়া কলেজে ইংরেজীতে অনার্স নিয়ে বি,
এ ক্লাসে ভর্তি
হন।
শৈশবে তিনি দত্ত উচ্চ বিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালে স্কুলের শিক্ষক সুরেশ চন্দ্র চৌধুরী’র নিকট সাহিত্য সাধনার
প্রেরণা পান। ১৯২৩ সালে তাঁর লেখা প্রথম পত্রিকায় ছাপা হয়। কলকাতা থেকে প্রকাশিত সে প্রত্রিকাটির নাম 'বিকাশ'। ঐ সময়ে সেখানে কবি বন্দে আলী মিয়া সহ-সম্পাদকের পদে কাজ করতেন। ডাকে পাঠানো সে
লেখাটি ছিল একটি কবিতা। পরে অনেক ছোট গল্পও ছাপা হয়। ১৯২৮ সালে কবি আবদুল কাদির এবং সংবাদিক আবুল কালাম শামসুদ্দীনের সান্নিধ্যে আসেন। ১৯৩৪-৩৭ সালে মাসিক
মোহাম্মাদীতে ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয় তাঁর প্রবন্ধ ‘‘বিশ্ব সাহিত্য পরিচয়’’।
১৯৪০ সাল পর্যন্ত কলকাতা কর্পোরেশনের অধীন বেগবাগান রোডস্থিত স্কুলে শিক্ষকতা করেছেন। স্কুলের শিক্ষকতার পাশাপাশি অতিরিক্ত আয়ের জন্য আবুল মনসুর আহমদ সম্পাদিত ‘‘দৈনিক কৃষক’’ এর কিশোর সাহিত্যের পাতা ‘‘চাঁদের হাট’’ সম্পাদনার দায়িত্ব গ্রহণ করেন। এই পাতাটি তিনি ‘‘মামা’’ নামে পরিচালনা করতেন। ১৯৪১ সালে কবি কাজী নজরুল ইসলামকে প্রধান সম্পাদক এবং আবুল মনসুর আহমদকে নির্বাহী সম্পাদক করে প্রকাশিত ‘‘দৈনিক নবযুগ’’ পত্রিকায় ‘‘আগুনের ফুলকী’’ নামের কিশোর সাহিত্যের পাতাটির সম্পাদনার দায়িত্ব প্রাপ্ত হন। পাতাটি তিনি ‘‘আতশবাজ’’ নামে পরিচালনা করতেন।
১৯৪৪ সালে তিনি
বংগীয় প্রাদেশিক সরকারের প্রচার বিভাগে চাকরি নেন এবং দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালনের পর ১৯৬২ সালে অবসর নেন। নেত্রকোণা থেকে ১৯৬১ সালে প্রকাশিক ‘‘উত্তর আকাশ’’ পত্রিকা এবং ১৯৭৮ সাল থেকে প্রকাশিত মাসিক সাহিত্য পত্রিকা ‘‘সৃজনী’’ সম্পাদনা করেন।
১৯৬০ এর দশক
থেকেই নেত্রকোণা ‘‘সাধারণ গ্রন্থাগারের’’ মাধ্যমে বিভিন্ন সাহিত্য সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডের বিস্তৃতি ঘটানোয় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। তিনি বেশ কিছু উপন্যাস ও বহু সংখ্যক গল্পের লেখক।
‘খালেকদাদ চৌধুরী' ছিলেন দক্ষ ফুটবল খেলোয়ার এবং মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ।
তিনি নেত্রকোণা মধু-মাছি
কচি-কাঁচা মেলার পরিচালক, সাধারণ গ্রন্থাগারের সম্পাদক, বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট, নেত্রকোণা ইউনিটের দীর্ঘকাল সম্পাদক ও সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন।
খালেকদাদ চৌধুরী তার সুদীর্ঘ ৭৮ বছর বয়সের প্রায় সবটুকু সময়ই ব্যয় করেছেন লেখালেখির পেছনে। ১৯৪৪ সালের ১ জুলাই সরকারি চাকরি পেয়ে
খালেকদাদ চৌধুরী নেত্রকোনায় চলে আসেন। সরকারের গণসংযোগ বিভাগের এ চাকরিটি তাঁকে নেত্রকোণা, সিলেট ও সুনামগঞ্জের গণমানুষের সাথে মেশার এবং তাদের জীবন সংগ্রাম প্রত্যক্ষ করার সুযোগ করে দেয়। ১৯৬১-তে তিনি চাকুরি থেকে অবসর
গ্রহণ করেন। খালেকদাদ চৌধুরীর সাহিত্য জীবনের শুরু ছাত্র জীবন থেকে। তিনি শতাব্দীর দুই
দিগন্ত গ্রন্থে তাঁর সাহিত্যের প্রেরণা লাভের উৎস হিসেবে পিতার কাছে শোনা ইতিহাসের বীরত্বপূর্ণ কাহিনীর কথা
উল্লেখ
করেছেন।
খালেকদাদ চৌধুরী একাধারে ছিলের সাহিত্যিক, সাংবাদিক, সম্পাদক, অনুবাদক। তাঁর আলোচিত উপন্যাস ‘‘চাঁদ বেগের গড়’’ এবং আলোচিত গল্প গ্রন্থ ‘‘একটি আত্মার অপমৃত্যু’’।
তাঁর অন্যান্য গ্রন্থের মধ্যে রক্তাক্ত অধ্যায়, গল্প সংগ্রহ, সাপমারির অভিশাপ, মরু সাহারায়, বাহারীস্থান-গায়েবী এবং
সর্বশেষ ‘‘শতাব্দীর দুই দিগন্ত’’ উল্লেখযোগ্য।
খালেকদাদ চৌধুরীর ১৯৮৩ সালে ২১ ফেব্রুয়ারী বাংলা একাডেমী পুরষ্কার লাভ করেন।
ইংরেজী ১৯৮৫ সালের ১৬ অক্টোবর তিনি ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ইন্তেকাল করেন।
খালেকদাদ চৌধুরীর মৃত্যুর পর সুনেত্র প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত হয় তার আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থ, শতাব্দীর দুই দিগন্ত। তার সম্পাদিত 'সৃজনী ও উত্তর আকাশ' বাংলাদেশের
সাময়িকীর
ইতিহাসে এক উল্লেখযোগ্য ঘটনা।
অত্যন্ত দুঃখের বিষয় শৈশব থেকে মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত অবিরাম লেখালেখির মধ্যে
নিয়োজিত এই মানুষটির সব লেখা গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয়নি।
পোষ্ট : বাংলাদেশ সময় : মঙ্গলবার রাত ১১: ৪৫ মিনিট, ১৬অক্টোবর,২০১২।